নবুয়ত ও রিসালাত: ইসলামী শিক্ষার মূল ভিত্তি।
নবুয়ত ও রিসালাত - বিস্তারিত আলোচনা।
**রিসালাতের সংজ্ঞা:**
রিসালাত
শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ "রিসালা" থেকে, যার অর্থ বার্তা বা পয়গাম। ইসলামী
পরিভাষায়, রিসালাত হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য প্রেরিত বার্তা যা নবী ও
রাসূলদের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। এই বার্তাগুলি মানবজাতিকে
সঠিক পথ দেখানোর জন্য
এবং আল্লাহর আদেশ ও নিষেধাবলী জানিয়ে
দেয়ার জন্য প্রেরিত হয়।
**নবুয়ত ও রিসালাতের পার্থক্য:**
- **নবুয়ত:** নবুয়ত
হল এমন এক অবস্থান যা
আল্লাহ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দান করেন, যাতে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশনা পান এবং মানুষকে তা জানাতে পারেন।
নবী আল্লাহর প্রেরিত বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।
- **রিসালাত:** রিসালাত
হচ্ছে সেই বার্তা বা আদেশ যা
আল্লাহ নবীদের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে পৌঁছান। রাসূলদের ক্ষেত্রে, তারা নবীর পাশাপাশি রিসালাতের দায়িত্বও পালন করেন।
নবুয়ত ও
রিসালাতের গুরুত্ব
নবুয়ত ও রিসালাত ইসলামের বুনিয়াদি আকিদার মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন যাতে তারা মানুষকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপনের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
**মানবজাতির হেদায়েতের জন্য রিসালাত:**
- **হেদায়েতের পথে
দিশারী:** নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর
পক্ষ থেকে প্রেরিত দিশারী যারা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব পালন করেছেন। কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত
নির্দেশাবলীর মাধ্যমে মানুষ তাদের ইহজগত ও পরজগত উভয়ের
সফলতা অর্জনের পথ খুঁজে পায়।
- **অজ্ঞতা দূরীকরণ:**
যুগে যুগে মানুষ যখন আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত
হয়ে অজ্ঞতার অন্ধকারে পড়ে গিয়েছিল, তখন আল্লাহ তাআলা নবী ও রাসূলদের পাঠিয়েছেন।
তাঁরা মানুষের মধ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়ে অজ্ঞতা দূর করেছেন।
** নবী এবং রিসালাতের চূড়ান্ততা:**
- **মুহাম্মদ (সাঃ)
এর নবুয়তের চূড়ান্ততা:** ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন শেষ নবী এবং তাঁর পর কোনো নবী
আসবেন না। তাঁর উপর নাযিলকৃত কুরআনই হলো চূড়ান্ত ও সর্বশেষ আল্লাহর
বিধান।
- **রিসালাতের সমাপ্তি:**
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সাঃ) কে সর্বশেষ রাসূল
হিসাবে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর রিসালাতের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান চূড়ান্তভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, "আজ আমি তোমাদের
জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণতা দান করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম।" (সুরা মায়িদা: ৩)
নবুয়ত ও রিসালাতের প্রকৃতি:
**আল্লাহর বার্তা প্রেরণ:**
- **প্রত্যক্ষ নির্দেশনা:**
আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি নবীদের কাছে বার্তা আসে যা তাঁরা তাঁদের
উম্মতের কাছে পৌঁছে দেন। এই বার্তাগুলো কুরআন,
হাদিস এবং অন্যান্য ঐশী কিতাবে সংরক্ষিত রয়েছে।
- **আল্লাহর প্রতি
আনুগত্যের শিক্ষা:** নবী ও রাসূলগণ মানুষকে
আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁরা মানুষকে শিখিয়েছেন কীভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে হয়।
**মুজিযা (অলৌকিক ঘটনা):**
- **মুজিযার ভূমিকা:**
নবী ও রাসূলগণকে আল্লাহর
পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল, যা মুজিযা নামে
পরিচিত। এই মুজিযার মাধ্যমে
তাঁরা মানুষের সামনে আল্লাহর শক্তির পরিচয় দিতে সক্ষম হন। যেমন, মুসা (আঃ) এর লাঠির মাধ্যমে
সাগর বিভাজন, ঈসা (আঃ) এর মৃতকে জীবিত
করা, এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে কুরআন
নাযিল ইত্যাদি।
নবুয়ত ও রিসালাতের দৃষ্টিতে কুরআন:
**কুরআনের মহত্ত্ব:**
- **কুরআন - চূড়ান্ত
মুজিযা:** মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত
কুরআন হল তাঁর সর্ববৃহৎ
মুজিযা। কুরআনের আয়াতগুলো এমনভাবে প্রণীত যে, তা কোনো মানুষের
দ্বারা প্রণীত হতে পারে না। এটি মানবজাতির জন্য চিরস্থায়ী হেদায়েতের উৎস।
- **কুরআনের অক্ষয়তা:**
কুরআনের বিশেষত্ব হলো এটি চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। এটি
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর রিসালাতের সাক্ষ্য
বহন করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
**কুরআনের বার্তা:**
- **সকলের জন্য
বার্তা:** কুরআন শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর দিশা। এতে উল্লেখিত নীতিমালা ও নির্দেশাবলী মানবজাতির
কল্যাণের জন্য।
নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষার বাস্তবায়ন:
**মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দেশনা:**
- **ব্যক্তিগত জীবনে:**
ইসলামের শিক্ষানুযায়ী, ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবী ও রাসূলদের আদর্শ
অনুসরণ করা উচিত। তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করতে পারি।
- **সামাজিক জীবনে:**
নবী ও রাসূলদের জীবন
ও আদর্শ সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলেছে। তাঁরা ন্যায়বিচার, ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং মানবাধিকারের শিক্ষার প্রচার করেছেন।
রিসালাতের সঠিক উপলব্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা:
**ইসলামী আকিদার মূল ভিত্তি:**
- **ইমানের রুকন:**
নবুয়ত ও রিসালাতে বিশ্বাস
রাখা ইসলামের রুকনগুলির মধ্যে অন্যতম। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে
উল্লেখ আছে যে, একজন মুসলিমের জন্য নবী ও রাসূলদের প্রতি
ঈমান রাখা বাধ্যতামূলক।
**তাবলিগ (দাওয়াত):**
- **রিসালাতের প্রচার:**
একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো নবী ও রাসূলদের প্রচারিত
বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ইসলামে দাওয়াত বা তাবলিগের গুরুত্ব
অত্যন্ত বেশি। নবীদের পথ অনুসরণ করে
মুসলমানরা এই দায়িত্ব পালন
করে।
কোন মন্তব্য নেই