al-quraner-ahoban

Header ADS

তাওহীদের ধরনসমূহ: আর-রুবুবিয়্যাহ, আল-উলুহিয়্যাহ, এবং আসমা ওয়া সিফাত

কুরআনে তাওহীদের দলিল: আল্লাহর একত্বের প্রমাণ 

তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব)

তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব

**তাওহীদ** শব্দটি আরবি ভাষার "وحد" (wahd) ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ একত্ব। ইসলামে তাওহীদ হলো এক আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করা এবং তাঁর সঙ্গে কোনো অংশীদারকে যুক্ত না করা। তাওহীদ হলো ইসলামের মূল ভিত্তি এবং প্রথম রুকন (বিশ্বাসের স্তম্ভ)

 

তাওহীদের ধরন

তাওহীদ তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়:

1. **তাওহীদ আর-রুবুবিয়্যাহ** (توحيد الربوبية) - আল্লাহর প্রভুত্বে একত্ব:

   - এটি বিশ্বাস করা যে আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিক দাতা এবং তিনি সকল কিছু পরিচালনা করেন।

   - কুরআন থেকে দলিল:

     - **সুরা ফাতিহা :**: "আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।" (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টির পালনকর্তা।)

     - **সুরা আয়াতুল কুরসী :২৫৫**: "আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।" (আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, অটল।)

 

2. **তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ** (توحيد الألوهية) - আল্লাহর উপাসনায় একত্ব:

   - আল্লাহর একমাত্র উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করা এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো উপাস্যকে যুক্ত না করা।

   - কুরআন থেকে দলিল:

     - **সুরা আল-ইখলাস ১১২:-**: "কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুন লাহু কুফুওয়ান আহাদ।" (বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।)

     - **সুরা আন-নাহল ১৬:৩৬**: "আর অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এই বলে), ‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত (মিথ্যা দেবতা) থেকে দূরে থাকো।’"

 

3. **তাওহীদ আসমা ওয়া সিফাত** (توحيد الأسماء والصفات) - আল্লাহর নাম গুণাবলিতে একত্ব:

   - আল্লাহর নাম এবং গুণাবলি তাঁর নিজের মতো মানা এবং এগুলোর ক্ষেত্রে কোনো বিকৃতি, তুলনা, অংশীদারিত্ব বা পরিবর্তন না করা।

   - কুরআন থেকে দলিল:

     - **সুরা ত্বা-হা ২০:**: "আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, সমস্ত সুন্দর নাম তাঁর।"

     - **সুরা আশ-শুরা ৪২:১১**: "তাঁর মতো কিছুই নেই, এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"

 

তাওহীদের গুরুত্ব

ইসলামে তাওহীদ হলো ঈমানের মূল ভিত্তি। এটি এমন একটি বিশ্বাস যা মানুষকে শিরক (আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপন) থেকে মুক্ত রাখে এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল ভক্তি আনুগত্য স্থাপন করতে সাহায্য করে। কুরআনে তাওহীদকে বারবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং শিরককে সবচেয়ে বড় পাপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

- **সুরা আন-নিসা :৪৮**: "নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরককে ক্ষমা করবেন না, কিন্তু তিনি তার নিচে যা কিছু আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।"

- **সুরা আল-মায়েদা :৭২**: "নিশ্চয়ই যারাই আল্লাহর সঙ্গে কোনো অংশীদার স্থাপন করেছে, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত হারাম করেছেন, এবং তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।"

 তাওহীদের প্রভাব

তাওহীদ একটি মুমিনের জীবনকে সর্বাঙ্গীণভাবে প্রভাবিত করে। এটি মানুষের আচরণ, চিন্তাভাবনা, এবং সম্পর্ককে শুদ্ধ করে। তাওহীদ বিশ্বাসীদের মধ্যে আল্লাহর প্রতি গভীর ভালবাসা, নির্ভরশীলতা এবং সম্পূর্ণ আনুগত্য সৃষ্টি করে।

 

1. **আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা**: একজন তাওহীদের বিশ্বাসী শুধু আল্লাহর উপর নির্ভর করে এবং তাঁর দয়া সাহায্য প্রত্যাশা করে।

2. **আল্লাহর প্রতি ভালবাসা**: তাওহীদ আল্লাহর প্রতি গভীর ভালবাসা সৃষ্টি করে, যা তাকে আল্লাহর আনুগত্যের পথে পরিচালিত করে।

3. **নির্ভীকতা**: তাওহীদের বিশ্বাস একজন মুমিনকে নির্ভীক করে, কারণ সে জানে যে আল্লাহই একমাত্র সাহায্যকারী এবং তিনি ছাড়া কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না।

উপসংহার

তাওহীদ ইসলামের মূলে অবস্থান করে এবং একজন মুসলিমের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। এটি শুধুমাত্র একটি তাত্ত্বিক ধারণা নয়, বরং এটি একজন মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে মানা এবং তাঁর সঙ্গে কোনো অংশীদারিত্ব স্থাপন না করাই তাওহীদের মূল শিক্ষা।

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.