al-quraner-ahoban

Header ADS

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হাই কমোড ব্যবহার করা কি ঠিক?

 

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হাই কমোড ব্যবহার করা কি ঠিক?

বর্তমান বিশ্বে টয়লেটে হাই কমোডের ব্যবহার আধুনিক জীবনযাত্রার একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত নিচু কমোড বা প্যান জাতীয় টয়লেটই বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহার করা সহজ ও ঝামেলামুক্ত তাই সাধারণ মানুষ এটি ব্যবহারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাদের মধ্যে হাই কমোড ব্যবহারে এক প্রকার অনাগ্রহ ও অস্বস্তি রয়েছে। চিরাচরিত অভ্যাস ও দেশীয় সংস্কৃতিও এই অনীহার পিছনে কাজ করে।


তবে নিচু প্যানওয়ালা টয়লেটের তুলনায় হাই কমোড ব্যবহার করা বেশি আরামদায়ক। কারণ এতে প্যান পদ্ধতির মত হাঁটু মুড়ে উবু হয়ে বসতে হয় না। তাই এটি বয়স্ক, অসুস্থ ও স্থূলকায় লোকদের জন্য সুবিধাজনক। এজন্য দেশে আজকাল হাই কমোড ব্যবহারের প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, স্টেশন, বন্দর এমনকি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বর্তমানে হাই কমোডের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।


কিন্তু আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে হাই কমোডের ব্যবহার কতটুকু সঙ্গত - তা ভেবে দেখার বিষয়। কেননা হাই কমোড দেখেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া এ দেশে অসম্ভব নয়। আর কমোড কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানেন না সেরকম লোকেরও অভাব নেই দেশে। যারা একটু-আধটু জানেন তাদেরও অনেকে তা সঠিকভাবে ব্যবহারের তরিকা জানেন না। শুধু আমাদের বাংলাদেশেই নয়; বিদেশেও এরকম লোক পাওয়া যায় বলেই মনে হয়। এজন্যই বিদেশের বিভিন্ন টয়লেটের দরজার ভেতরের দিকে কিংবা কমোডের ঢাকনার উপরে, অথবা টয়লেটের ভেতরের কোনো জায়গায় চিত্রসহ হাই কমোড ব্যবহারের নির্দেশিকা লাগানো থাকে।


অবহেলা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে আমাদের দেশে এরূপ সচিত্র নির্দেশানাবলী দিয়েও খুব একটা কাজ হয় না। ফলে কমোডের ঢাকনার উপরে চড়ে বসে পা পিছলে ভেতরে পড়ে যাওয়া, চড়তে গিয়ে কমোড ভেঙ্গে ফেলা এ জাতীয় বিদঘুটে কাহিনী ঘটতেও শোনা যায়।


এছাড়া এমনিতেও হাই কমোডে শৌচকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে শরীর ও কাপড়ের পবিত্রতা নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ কমোডে থাকা পানিতে যখন উপর থেকে ময়লা পড়ে তখন অনেক সময় নিচ থেকে পানির ছিটা এসে শরীর বা কাপড়ে লাগার সম্ভাবনা দেখা যায়। আবার জরুরত শেষে পবিত্রতা অর্জনের জন্য যখন ওয়াটার স্প্রে (পুশ শাওয়ার) দ্বারা পানি ব্যবহার করা হয় তখনও নিচের ময়লা মিশ্রিত পানির ছিটা উপরে আসতে পারে। পাশাপাশি এক টয়লেট অনেকে ব্যবহার করলে কমোডের রিম বা বসার সিট অনেক সময় ভেজা থাকে। তাতে নাপাকিও থাকতে পারে।


এক কথায়, হাই কমোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ পবিত্রতার ব্যাপারে এক প্রকার সন্দেহ থেকেই যায়। অনেকের জন্য নাপাকী থেকে বেঁচে থাকা অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে। এসব কারণে বাথরুমে হাই কমোড বানানো ও তা ব্যবহারে শরীয়তের কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি না- অনেকেই তা জানতে চান। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :


হাই কমোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইস্তেঞ্জার কয়েকটি সুন্নত ও আদব পালন করা সম্ভব হয় না। যেমন, শৌচকর্মের সময় বাম পায়ের উপর কিছুটা ভর করে ডান পা খাড়া রাখা সুন্নত এবং স্বাস্থ্যসম্মত।


হযরত সুরাকা ইবনে মালিক رضى الله عنه বলেন,


ﻋﻠﻤﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫا ﺩﺧﻞ ﺃﺣﺪﻧﺎ اﻟﺨﻼء ﺃﻥ ﻳﻌﺘﻤﺪ اﻟﻴﺴﺮﻯ، ﻭﻳﻨﺼﺐ اﻟﻴﻤﻨﻰ


‘রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, যখন আমাদের কেউ শৌচাগারে যাবে তখন সে যেন বাম পায়ের উপর ভর করে ডান পা খাড়া রেখে প্রয়োজন সারে।’

[আস-সুনানুল কুবরা বায়হাকী, হাদীস : ৪৫৭; আল-মুজামুল কাবীর তবারানী, হাদীস : ৬৬০৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ১০২০; আততালখীসুল হাবীর, হাদীস : ১৩৮]


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর رضى الله عنه বর্ণনা করেন,


ﻟﻘﺪ اﺭﺗﻘﻴﺖ ﻳﻮﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ ﺑﻴﺖ ﻟﻨﺎ، ﻓﺮﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﻟﺒﻨﺘﻴﻦ، ﻣﺴﺘﻘﺒﻼ ﺑﻴﺖ اﻟﻤﻘﺪﺱ ﻟﺤﺎﺟﺘﻪ


‘একদিন আমি আমাদের ঘরের ছাদে উঠলাম। তখন দেখলাম, রসূলুল্লাহ ﷺ দুটি ইটের উপর বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বসেছেন।’

[সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৪৫]


সুতরাং স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় হাই কমোড বিশিষ্ট টয়লেট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। উপমহাদেশের সমকালীন ফকীহগণের অনেকে বিনা ওজরে এ ধরনের কমোড ব্যবহারকে মাকরূহ তথা অনুত্তম মনে করেন। তাই প্রয়োজন ছাড়া শুধু ফ্যাশন স্বরূপ বাথরুমে হাই কমোড না বানানো উচিত। তবে প্রয়োজন হলে হাই কমোড বানাতে ও ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। যেমন কেউ নিচু প্যানে বসে ইস্তেঞ্জা করতে অক্ষম বা বসলে যথেষ্ট কষ্ট হয় তার জন্য হাই কমোড বানানো ও তা ব্যবহার করা বৈধ৷ তদ্রূপ কোথাও যদি হাই কমোড ছাড়া বিকল্প টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রেও হাই কমোড ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই।


[জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০]


উল্লেখ্য যে, প্রয়োজনের সময় হাই কমোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পবিত্রতার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে যেন নিচ থেকে নাপাক পানির ছিটা কোনোভাবেই শরীর বা কাপড়ে এসে না লাগে। ছিটা আসলে ভালোভাবে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। স্প্রেয়ার দিয়ে পানি ব্যবহারের সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যেন স্পীডের তীব্রতার কারণে পানি কোনোভাবে নাপাকিসহ পেছন দিক থেকে পিঠের দিকে উঠে না আসে। নাপাকি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর পানির ছিটা এলে সমস্যা নেই।


এক্ষেত্রে নাপাক ছিটা থেকে বাঁচার জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে যে, টিস্যূ পেপার নিয়ে আগে কমোডের রিম বা সিটটা মুছে কিংবা তার উপর কিছু টিস্যূ পেপার বিছিয়ে তারপর বসবে। এতে কমোডের রিমের উপর থাকা নাপাকি বা তরলতা শরীরে লাগতে পারবে না। আর কমোডের ভেতরের পানি ছিটকে এসে শরীর বা কাপড়ে লাগা ঠেকানোর জন্য শৌচকর্ম শুরুর আগে কিছু টিস্যূ কমোডের পানিতে ফেলে দিবে। এতে পরবর্তীতে আর ময়লা পানি ছিটকে আসতে পারবে না।


বিশেষ দ্রষ্টব্য :


এ তো গেলো শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে হাই কমোড ব্যবহারের হুকুম সম্পর্কে আলোচনা। এদিকে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ীও হাই কমোড ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে শারীরিক বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয় বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। নিম্নে এ সম্পর্কিত একটি নিউজ উল্লেখ করা হলো :


“উঁচু কমোডে, উঁচু হয়ে বসার পদ্ধতি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছে-এমনটাই বলা হয়েছে সম্প্রতি এক গবেষণায়। গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ইসরা+য়েলি ম্যাগাজিন ‘জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স’-এ।গবেষকরা বলছেন, অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন, হেমোরয়েডস, অন্ত্রের প্রদাহ, কোলন ক্যানসার, পেলভিক ক্যানসার, মলত্যাগে সমস্যা ইত্যাদি শহরে বেশি প্রচলিত। তবে গ্রামাঞ্চলে তেমনটা নয়। এর একটি কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য আধুনিক বসার পদ্ধতিকে বা উঁচু কমোডে বসার পদ্ধতিকে।


তাই যদি উঁচু কমোডে বসার ব্যাপারে ডাক্তারের নির্দেশ না থাকে তাহলে নিচু কমোডে উবু হয়ে বসার অভ্যাস করাই উত্তম বলে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।”

[তথ্যঃ এনটিভি নিউজ।]


সারকথা, ইসলামী শরীয়ত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে উপরে বর্ণিত বিষয়সমূহের কারণে নিতান্ত বাধ্য না হলে হাই কমোড ব্যবহার না করাই শ্রেয় হবে।

কোন মন্তব্য নেই

merrymoonmary থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.